জুমার দিনের গুরুত্ব মর্যাদা ও আমল সমূহ
টাইমস বাংলা নিউজ ২৪.কম ইসলামিক ডেস্কঃ জুমার দিন মুসলমানদের কাছে সপ্তাহের অন্য দিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। জুমার দিন অর্থাৎ শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদাঃ
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়,তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো,এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো,আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমা : ৯-১০)
জুমার দিন জুমার নামাজ আদায়ের জন্য যে যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে। মহানবী (সা.) বলেছেন,যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগমণ কারীদের নাম লিখতে থাকে।
যে সবার আগে আসে সে একটি উট সদকা করার সমান নেকি পাবে। তারপর যে আসে সে ব্যক্তি একটি গাভী সদকা করার নেকি পাবে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো নেকি পাবে। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো নেকি পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন,তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি : ৮৮২)
হযরত রাসূল (সাঃ)-এর হাদিস থেকে জুমার দিনের আরও কিছু আমলের কথা চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে।
(১) হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে।
এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে,আসার সময় হেঁটে আসবে,কোনো বাহনে চড়বে না,ইমামের কাছাকাছি বসবে,এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবেনা,সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ। (আবু দাউদ : ৩৪৫)
(২) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,যখন জুমার দিন কোনো ব্যক্তি গোসল করে এবং সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে,এরপর তেল মাখে বা ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয়,আর দুজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না করে, এরপর সে তার জন্য ধার্যকৃত নামাজ আদায় করে এবং ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (সগিরা গোনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৮৮৩)
(৩) জুমার দিন অন্য দিনের তুলনায় বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়ার কথা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে। আর এই দিনই (সিঙ্গায়) ফুৎকার হবে এবং এই দিনই সবাই অজ্ঞান হবে। কাজেই তোমরা এই দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। (আবু দাউদ : ১০৮৯)
জুমার দিন এমন একটি সময় আছে বান্দা ওই সময় যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তা কবুল করে নেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, জুমার দিন বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তাই কবুল করে নেন। তোমরা ওই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান করো। (বুখারি : ৯৩৫)জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলসমূহঃ
১.জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করা। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুলকাটা একটি ভালো কাজ।
২.জুমার নামাজের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৩.মিসওয়াক করা।
৪.গায়ে তেল ব্যবহার করা।
৫.উত্তম পোশাক পরে জুমা আদায় করা।
৬.মুসল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
৭. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
৮.জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
৯.বেশি বেশি দোয়া করা।
১০.মুসল্লিদের ফাঁক করে সামনের কাতারে না যাওয়া।
১১.সুযোগ থাকলে দু’রাকাত‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নফল আদায় করা।
১২.জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
পাঠক বৃন্দ তাই আসুন আমরা সবাই জুমার দিনে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকি।