কোন কোন কারনে গোসল ফরজ হয়
টাইমস বাংলা নিউজ২৪.কম ইসলামী ডেস্কঃ-ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সব বিষয় পবিত্র আল-কোরআন ও হাদীসে লিপি বদ্ধ রয়েছে। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি যে সব কারণে গোসল ফরজ হয় অর্থাৎ গোসল ফরজ হওয়ার কারন বা গোসল ফরজ হওয়ার কারন সমূহ।
তাহলে চলুন দেখে নেই আজ কোন কোন বিষয় আলোচনা হবেঃ-
(১) গোসল পরিচিতি।
(২) কোন কোন কারনে গোসল ফরজ হয়।
(২) কোন কোন কারনে গোসল ফরজ হয়ঃ-আমরা অনেকেই জানিনা কী কী কারণে গোসল ফরয হয়। তাহলে চলুন জেনে আশি যেসব কারণে গোসল ফরজ হয়।
নিম্ন বর্ণিত যে কোন এক বা একাধিক কারণে গোসল ফরয হয়। যেমনঃ-স্ত্রী সহবাস,স্বপ্নদোষ,মনি নির্গত হওয়া,হায়েয-নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়া, ইসলাম গ্রহণ করলে,গোসল ফরয হওয়ার আরো একটি কারণ 'মৃত্যু'।
১.স্ত্রী-সহবাসঃ-পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (খাতনার স্থান পর্যন্ত অংশ এতটুকু পরিমাণও) যদি স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে তবে স্বামী-স্ত্রী দুই জনেরই গোসল ফরয হয়ে যাবে। এমনকি বীর্যপাত না হলেও গোসল ফরজ হবে। হাদীসে উল্লেখিত আছে যে,পুরুসের লিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গের সাথে একত্রিত হলেই গোসল ফরয হয়ে যায়। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত,এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,যখন কোন পুরুষ তার (স্ত্রীর) দুই পা ও দুই রানের মাঝে বসবে এবং একের লজ্জাস্থান অপরের লজ্জাস্থানের সাথে লেগে যাবে তখন (দুজনেরই) গোসল ফরয হয়ে যাবে। (মুসলিম: ৩৪৯)
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,কোন ব্যক্তি যদি তার (স্ত্রীর) দুই পা ও দুই রানের মাঝে বসে (বীর্যপাতের) চেষ্টা করে তাহলেও তার উপর গোসল ফরয হয়ে যাবে। (বুখারী: ২৯১)
২.স্বপ্নদোষঃ-যদি কোন নারী-পুরুষ স্বপ্ন দেখে যে,সে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে তখন তাকে স্বপ্নদোষ বলে। জাগ্রত হওয়ার পর যদি কাপড়ে মনি দেখতে পায় অর্থাৎ কাপড় ভেজা মনে হয় তাহলে গোসল ফরয হয়ে যায়। আর মনি পাওয়া না গেলেও গোসল ফরয হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে একই বিধান। কেননা তাদেরও স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে।
এক আনসারী মহিলা সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন,হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) স্বপ্নদোষ হলে কি মেয়েদের উপরও গোসল ফরয হয়? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,যদি পানি (অর্থাৎ বীর্য) দেখতে পাওয়া যায় তাহলে গোসল ফরয হবে (অন্যথায় গোসল ফরজ হয় না )। (বুখারী: ২৮২) আর যদি এমন হয় যে স্বপ্নের কথা মনে নেই, কিন্তু কাপড় ভেজা লাগছে তাহলেও গোসল ফরয হবে।
৩.মনি নির্গত হওয়াঃ-যে কোন কারনেই হোক যদি বীর্যপাত হয় তাহলে গোসল ফরয হবে। আর তা বৈধ বা অবৈধ যে কোন পন্থায়ই হোক না কেন। আর যদি কারো সাদা গাঢ় পানি বের হয়,কিন্তু উত্তেজনার সাথে নয়,আর সে সাবালেগও নয়,তাহলে ধরা হবে এটি একটি রোগ। এ জন্য গোসল ফরয হবে না। তখন লিঙ্গের মাথা ধৌত করে শুধু ওযু করে ফেললেই হবে।
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন যদি (লজ্জাস্থানের অগ্রভাগে) মযী দেখতে পাও তাহলে তোমার লিঙ্গ ধুয়ে নাও এবং সালাতের ওযূর মতো ওযু করে ফেল। আর যদি সজোরে প্রবাহিত হয়ে মনি বের হয়ে আসে তাহলে গোসল কর। (আবু দাউদ: ২০৬)
৪.হায়েয-নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়াঃ-হায়েয ও নিফাসের রক্ত একই। হায়েয হলো,মেয়েদের মাসিক রক্তস্রাব আর নিফাস হলো সন্তান প্রসবের পর প্রবাহিত রক্ত। উভয় রক্ত প্রবাহ যখন বন্ধ হবে তখনই গোসল ফরয হয়ে যা। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূল (স) ফাতেমা বিনতে আবু ইবাইসকে আদেশ করেন, হায়েয শুরু হলে সালাত ছেড়ে দাও। আর হায়েয শেষ হলে গোসল কর এবং নামায পড়তে শুরু কর। (বুখারী: ৩২০,ইফা:৩১৪)
৫.গোসল ফরয হওয়ার পঞ্চম কারণ মৃত্যুঃ-কোন মুসলমান ব্যক্তি মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়া জীবিতদের উপর ফরয। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তাকে বরই পাতামিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। (বুখারী: ১২৬৬) তবে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয় তাদের জন্য গোসল ফরয নয়।
প্রিয় দর্শক আসুন আমরা সবাই ইসলামী বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করি। আর গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে আমরা ফরজ আদায় করে ফেলি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন আমিন।
ডি এম এস/১৫/৬/২০২৩