টাইমস বাংলা নিউজ ২৪.কম স্বাস্থ্য ডেস্কঃ আমাদের অধিকাংশেরই পেটে গ্যাস বা অ্যাসেসিডি হয়ে থাকে। যেটাকে আমারা গ্যাসষ্ট্রিক বলে থাকি। এই সমস্যা প্রায় প্রতিটা মানুষের কম বেশি হয়ে থাকে। আর এটি এ সময়ের সবচেয়ে সাধারন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে,এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই। এর হাত থেকে বাঁচার অনেক উপায় রয়েছে। তবে,গ্যাসষ্ট্রিক থেকে মুক্তি বা সমাধান পেতে চাইলে মেনে চলতে হবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম। তাহলে চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আশি।
গ্যাসষ্ট্রিক কি What is Gastric?
গ্যাষ্টিক মূলত পাকস্থলিতে গ্যাস বা অ্যাসিড জমা হওয়া। আমাদের পেটের ভেতরে থাকে হাইড্রোক্লোরাইড এসিড,যেটি বিভিন্ন এনজাইমের সহায়তায় আমাদের পাকস্থলিতে খাবার হজমে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু আমরা যখন খাবারের অনিয়ম করে থাকি বা অতিরিক্ত পরিমানে তৈলাক্ত খাবার খাই,তখন পাকস্থলিতে এই এসিডের পরিমান বেড়ে যায়। তখন আমাদের পেটে গ্যাস বা অ্যাসেসিডি হয়ে থাকে। যেটা আমরা গ্যাসষ্ট্রিক বলে জানি।
গ্যাষ্টিক কেন হয় Why is gastic?
পেটে গ্যাস হওয়ার নানা কারন রয়েছে।তার মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ও প্রধান কারন হলো খাবার ঠিকমতো না খাওয়া বা না খেয়ে থাকা। আমরা যখন খাবার গ্রহণ করে থাকি,সে সময় আমাদের পাকস্থিলিতে থাকা হাইডোক্লো রাইড এসিড আমাদের গ্রহণকৃত খাবারকে বিভিন্ন এইজাইমের সহায়তায় ভেঙ্গে পরিপাকের গ্রহণ উপয়োগী করে তুলে।
এটি প্রতিবার খাবার গ্রহণ করার পরই এই কাজ করে থাকে এই এসিড। কিন্তু যখন আমরা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করি না বা না খেয়ে থাকি তখন,আমাদের পাকস্থিলেতে থাকা হাইড্রোক্লোরাইড আমাদের পাকস্থিলিতে খাবারের খুঁজ করে। কিন্তু যখন খাবার না পায় তখন এটি পাকস্থলির বিভিন্ন পর্দার সাথে বিক্রিয়া করে থাকে।
যার ফলে পাকস্থিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এবং এর ফলে গ্যাষ্টিকের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন,পেট ব্যাথা করা,বুক জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে পাকস্থিলে গ্যাসষ্ট্রিক থেকে আলসার এ পরিনত হয়ে যা। তাছাড়া আরো অনেক কারনে গ্যাসষ্ট্রিক হয়ে থাকে। অতিরিক্ত পরিমানে তৈলাক্ত খাবার খাওয়া,বিশেষ করে খালি পেটে যারা তৈলাক্ত খাবার খেয়ে থাকেন তাদের গ্যাষ্টিক হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।
শুকনা জাতীয় খাবার বেশি পরিমানে খাওয়া ও কম পরিমান পানি খাওয়া গ্যাসষ্ট্রিকের আরও একটি কারন। তাই যারা বা যাদের মধ্যে এই অভ্যাসগুলো রয়েছে তাদের এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। তা না হলে গ্যাসের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না।
গ্যাসষ্ট্রিকের প্রধান লক্ষনগুলো কি কি? গ্যাসষ্ট্রিকের লক্ষনগুলো কি কি। সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
গ্যাসষ্ট্রিকের প্রধান লক্ষনগুলো:
১.বুক জ্বালা পোড়া করা ।
২.পেট ব্যাথা করা ।
৩.বদহজম।
৪.বমি বমি ভাব ।
৫.পেট ভরা ভরা মনে হওয়া ।
৬.খাবারে অনিহা ।
৭.টক ঢেক হওয়া ।
মুখে রুচি না থাকা বা কোন খাবারে প্রতি আগ্রহ বা ইন্টারেষ্ট না থাকা সহ নানা সমস্যায় ভোগেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের উপায়
গ্যাসষ্ট্রিক এমন একটি রোগ যা চাইলেই আপনার কিছু খাদ্য অভ্যাসই আপনাকে, এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এর জন্য আপনার খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাদ্য বাদ দিতে হবে,এবং কিছু খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
আপনার খাদ্য তালিকা থেকে যেসব খাদ্য বাদ দিতে হবে সেগুলো হলো:-
(১) অতিরিক্ত তৈলাক্তযুক্ত খাবার:-অতিরিক্ত তৈলাক্তযুক্ত খাবার। অতিরিক্ত তৈলাক্তযুক্ত খাবার আপনার গ্যাষ্টিক হওয়ার অন্যতম একটি কারন। আপনি যখন অতিরিক্ত তৈলাক্তযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন,তখন আপনার পাকস্থলীতে ওই খাবারগুলো ঠিকমত পরিপাক হয় না। এবং খাবরগুলো পাকস্থলীর উপরিস্তরে ভেসে বেড়ায় যা আপনার খাদ্য পরিপাকের বাধার সৃষ্টি করে। তাই যতটা সম্ভব এই ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
(২) অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার:-অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবারও আপনার গ্যাষ্টিক হওয়ার একটি বড় কারন। এই ধরনের খাবারে অতিরিক্ত পরিমানে তেল থাকে যা আমাদের পাকস্থলীর পরিপাকে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে আমাদের বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় ।
(৩) ফাস্টফুট ও অন্যঅন্য খাবার:-আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা প্রতিদিন বাহিরের কোন না কোন খাবার খেয়ে থাকি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল না, কারন এই ধরনের খাবারে তেল ও মসলাগুলো ভাল মানের হয় না,যার ফলে আমাদের পাকস্থলীর পরিপাক ক্রিয়া ভাল হয় না।
(৪) শুকনো জাতীয় খাবার:-শুকনো খাবার খেলে আমাদের পাকস্থলী খাবার গুলোকে ঠিকমতো পরিপাক করতে পারে না। যার ফলে আমাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য রোগ হয় এবং আমাদের খাবারগুলো সহজে হজম হয় না ও পেটে গ্যাস এর সৃষ্টি হয়। তাই এ জাতীয় খাবার কম পরিমানে খাওয়া ভাল।
আপনার খাদ্য তালিকায় যেসব খাদ্য যোগ করতে হবে সেগুলো হলো:-
(১) আঁশজাতীয় খাবার:- আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশ জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন। কারন আঁশ জাতীয় খাবার আপনার হজমে ভাল কাজ করে। এবং এ জাতীয় খাবার আপনার পাকস্থলী দ্রুত পরিপাক করে। এই জাতীয় খাবার যেমন শশা,কলা,খেজুর, আপেল,পেয়ারা,আমরা,পেপে ও আম ইত্যাদি।
(২) পর্যাপ্ত পরিমানে পানি:-প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৩০ থেকে ৩.০০ লিটার পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করার ফলে আপনার গ্রহণকৃত খাদ্য পাকস্থলী ঠিকমতো পরিপাক করতে পারবে ও হজম ভাল হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করার ফলে আপনার পেটে গ্যাস জমা হতে পারবে না।
(৩) ইসবগুলের ভূষি:-প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভূষি ও সাথে তোকমার মিশ্রনে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে পান করুন। এটি আপনার পেটের গ্যাস হওয়ার পরিপান অনেকটা কমিয়ে দেবে। তাই নিয়মিত এটি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
(৪) শাকসবজি-ফলমূল:-আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শাকসবজি জাতীয় খাদ্য রাখুন। শাকসবজি আপনার হজমে ভাল কাজ করে। যেমন,লাউ,পুঁই শাক,লাল শাক,ঢেরস,সহ ইত্যাদি সবজি। খাবার তালিকায় প্রতিদিন শাক সবজির পাশাপাশি কিছু আঁশ জাতীয় ফলও রাখার চেষ্টা করবেন,যেমন,আপেল কমলা,ডালিম,পেয়ারা সহ ইত্যাদি ফল ।
(৫) লেবু:-প্রতিদিন খালি পেটে একগ্লাস পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এতে করে আপনার পেটের চর্বি ও গ্যাস,দুইটায় অনেকটা কমে যাবে।